লক্ষ্য:
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মূল লক্ষ্য প্রতিটি পরিবারকে মানব ও অর্থনৈতিক সম্পদের সর্বত্তোম ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই আর্থিক কার্যক্রমের একক হিসেবে গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র ৪০% থেকে ২০% এ নামিয়ে আনা।
কেন এ প্রকল্প?
বাংলার কৃষি এবং বাংলার কৃষক একই সুতোয় বাঁধা। এটিকে ওয়ানস্টপ বা সিঙ্গেলডোর সার্ভিসও বলা যেতে পারে। কেননা যে কৃষক ধান ফলায়, সে বাড়ির আঙ্গিনায় শাক সবজির আবাদ করে, সে আবার তার পুকুরে মাছের চাষও করে। তিনিই আবার দুটো ছাগল, একটি গরু দশটি কবুতর পালন করেন। কেননা দৈনন্দিন জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের মধ্যে এগুলো আবশ্যকীয়ভাবে প্রয়োজন পড়ে। এর বিকল্প নেই। সুতরাং খামার ভিত্তিক পরিকল্পনা কৃষকের চলমান বা আবহমান বাস্তবতার ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারলে শিরোনাম বাজিমাৎ। যেন একজন কৃষক-কৃষাণী তার চৌহদি থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু অনায়াসে পেয়ে যায় এবং বাড়তি অংশ বাজারে বিকিয়ে অতিরিক্ত দু'পয়সা আয় করতে পারেন। এদেশে প্রতিটি পরিবার যদি সমৃদ্ধ হয়ে সুখে থাকে তাহলে নিশ্চিত সুখে থাকবে বাংলাদেশ।
বসত বাড়ির মডেল
একটি বাড়ি একটি খামার থিমটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাটে ৪টি মডেলে বাস্তবায়ন করা যায়। প্রথমটি ভূমিহীন এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্যে, দ্বিতীয়টি ক্ষুদ্র বা ছোট কৃষকদের জন্যে, তৃতীয়টি মাঝিরি কৃষকদের জন্যে এবং চতুর্থটি বড় কৃষকদের জন্যে। এভাবে ক্যাটাগারি করে পরিকল্পনা মডেল তৈরি করলে সুষ্ঠু বাস্তবায়নের সুবিধা হবে এবং সফলতাও বেশি আসবে। মোটকথা ক্যাটাগরিক্যালি কৃষক নিজেদের অবস্থা, পরিসর, সম্পদ, পুঁজি, ক্ষমতা, সুযোগ এবং বাস্তবায়নের কারিশমা দিয়ে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এক্ষেত্রে উদহারণ দিয়ে বলা যায় প্রান্তিক ক্ষুদ্র কৃষক যেখানে ঘরের চালে লাউ কুমড়ার চাষ করবে সেখানে বড় কৃষক তেপান্তরের কাছে মাঠজুড়ে লাউ কুমড়ার আবাদ করবে। আবার ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষক যখন আঙ্গিনায় কলমি পুঁইশাকের আবাদ করবে সেক্ষেত্রে মাঝারি বা বড় কৃষক অবারিত পরিসরে লেটুস, পার্সলি, ক্যাপসিকাম, রামবুটান, স্বদেশী বিদেশী ফসলের মিশ্র চাষ করবে। ছোট কৃষক আপেল-বাউ-থাই কুলের বড় বাগান করবে। প্রতিটি মডেলে শাক সবজি, ফল, ফুল, মশলা, ভেষজ, কাঠ, বাহারী, দানাদার, তেল, ডালসহ সব আবশ্যকীয় ফসলের জীবন্ত ফসলপুরী গড়ে তুলবে। অর্থাৎ প্রতিটি মডেলে যৌক্তিক পরিকল্পনা করে স্বপ্নীল ভুবন সাজাতে হবে, বাজাতে হবে এবং আবশ্যই পরিচর্যা ব্যবস্থাপনা শতভাগ নিশ্চিত করে অনুসরণীয় মডেলে রূপান্তর করতে হবে।
মাঠ ফসল
মাঠ ফসর আমাদের কৃষিভিত্তিক খাদ্য যোগানের সিংহভাগ অবদান রাখে। সুতরাং তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মাঠ ফসলের প্রতি। জমি, অবস্থান, আবহাওয়া, শস্যবিন্যাস, চাহিদা, বাজার, জলবায়ু প রিবর্তন সর্বোপরি কৃষকদের চাহিদার সাথে সর্বোচ্চ সমন্বয় করে মাঠের কাব্যগাঁথা রচনা করতে হবে এবং ফসলবিন্যাসের মানচিত্র আঁকতে হবে। এতে খরচ যাবে কমে লাভ হবে বেশি। তবে আধুনিক মানসম্মত বীজ, সময় মতো বপন-রোপণ, অজৈব রাসায়নিক সারের সমন্বয়ে সুষম সার প্রয়োগ, সেচ ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, সংরক্ষণ মোটকথা সমন্বিত কৃষিব্যবস্থাপনা অনুসরণ করে লাভজনক ফসল ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে।
পারিবারিক বাগান
বাড়ির আঙ্গিনার একচিলতে জমি পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় হয়ে ওঠতে পারে পরিবারের সারা বছরের পুষ্টির নিত্য যোগানদার। কৃষক পারে বিষমুক্ত নিত্য যোগানদার। কৃষক পারে বিষমুক্ত পছন্দের শাকসবজি খেয়ে সুস্থ জীবন যাপন করতে। বারমাসী মরিচ, সিংনাথ বেগুন, মাচায় চাউলে লাউ কুমড়া চালকুমড়ার লতানো বাহনি, গাঁদাফুলের বর্ণিলচ্ছটায় বসতবাড়ি আঙ্গিনাকে সাজারে অপরূপ সাজে। ছোট্ট জমিতে ভাগাভাগি করে ফলাতে হবে মৌসুমি শাকসবজি। একটি উদাহরণ দিয়ে নকশাটাকে বিশ্লেসন করা যায়।
১নং প্লটে ফুলকপি,
২নং প্লটে টমেটো,
৩নং প্লটে বাঁধাকপি,
৪নং প্লটে বেগুন,
৫নং প্লটে ওলকপি
৬নং প্লটে শালগম।
যথাযথভাবে উৎপাদন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তবে রহস্য এবং কৌশল হলো অন্য জায়গায়। প্রতিটি প্লটের দু'পাশে-
১নং প্লটে পেঁয়াজ,
২নং প্লটে রসুন,
৩নং প্লটে ধনিয়া,
৪নং প্লটে লেটুস,
৫নং প্লটে আদা,
৬নং প্লটে মৌরি
এভাবে সাজিয়ে লাগাতে হবে। তাছাড়া বেড়া হিসেবে চারপাশে অড়হর লাগালে শুধু ফসল ফইনই আসবে না এদের ঝাঁঝালো গন্ধের কারণে অপকারি পোকামাকড় রোগ থেকে রক্ষা পাবে বাগানের ফসল। তাহলে শুধু কৌশল আর পরিকল্পনা কারণে রক্ষা পাবে পারিবারিক বাগানের ফসল। খরচ যাবে কমে লাভ হবে বেশি।
ঔষুধি বাগান
জীবন আছে বলে অসুখ আছে। সুখ পেতে হলে অসুখ দূর করতে হবে। আর অসুখ দূর করতে হবে ওষুধ দিয়ে। আমরা এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ভেষজসহ নানাবিধ কৌশলে রোগ সারাবার চেষ্টা করি। কিন্তু একথা বিনয়ের সাথে স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের অফুরন্ত ওষুধি গাছের ভাণ্ডার এখনো ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রোগব্যাধির উপশম করতে। আমাদের বসতবাড়ির নিম, তুলসী, বাসক, আকন্দ, হরিতকি, বহেরা, আমলকী কি এখনো আমাদের রোগগাঁথায় দাওয়াই হিসেবে বিপদে বন্ধুর কাজ করেনা? হাজারো ঐতিহ্যে ভরপুর এসব রোগবালাইনাশক অমূল্য সম্পদের নাম আমরা জানিও না, এদের পুরোপুরিভাবে চিনিও না। জীবনের সাময়িক দায় মেটাতে এসব চিরায়ত সম্পদকে কাজে লাগালে উপকার হবে আমাদের। তাই একটি পরিকল্পিত আধুনিক পারিবারিক ওষুধি বাগান প্রতিষ্ঠা করলে পারিবারিক অনেক তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান অনায়াসে করা যাবে।
মাছ
মাছ আমাদের আমিষের এবং অন্যান্য স্বাদের সহজিয়া উৎস। কিন্তু এখন আর আগের মতো প্রয়োজনে, ইচ্ছে অনুসারে মাছ খাওয়া যায়না। কারণ উৎপাদন কম, যোগান কম, দাম বেশি। কিন্তু একটি বাড়ি একটি খামার কর্মসূচির মাধ্যমে মাছের যেগান নিশ্চিত করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে এজমালি বা যৌথমালিকানার পুকুরে পরিকল্পিতভাবে আধুনিক উপায়ে মাছ চাষ করে যৌথভাবে লাভবান হওয়া যায়। যদি কোন কারণে যৌথমালিকানায় এ কাজটি সম্ভব না হয় তাহলে নতুন প্রযু্ক্তি খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি অবলম্বনে এ কাজটি অন্যভাবে সম্পাদন করা যায় আনায়াসে। শুধু কি তাই? ঘরের আশপাশে ডোবা/গর্ত/চৌবাচ্চা/টাঙ্কি পদ্ধতি অবলম্বনে পারিবারিক চাহিদা মেটাবার জন্যে মাছ উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া প্লাবনভূমিতে মাচ চাষ, পতিত জলাধারে মাছ চাষ, প্রতিবাড়ির প্রতিটি পুকুরে পরিকল্পিভাবে মাছ চাষ কর্মসূচির আওতায় এনে মাছে মাছে ভরে দেয়া যাবে এ বাংলার মৎস্য ভাণ্ডার, স্বাদ পাবে মানুষ, সমৃদ্ধ হবে মাছ ভিত্তিক পুষ্টি রেখা।
পশু ও পাখী এদেশে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে ২/৪টি হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া, গরু-মহিষ পালন করা না হয়। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই কখনো আধুনিক কলাকৌশল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। এ কারণে আমরা রিটার্নও পাইনা তেমন। এক্ষেত্রে আধুনিক বৈজ্ঞানিক কৌশল অবলম্বন করে পরিকল্পিত উপায়ে লেয়ার, ব্রয়লার, দুধের জন্যে, মাংসের জন্যে ছাগল/ভেড়া/গরু/মহিষ পালন করা যায়। তবে জাত নির্বাচন, আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, পুষ্টি, রেয়ারিং, কেয়ারিং মার্কেটিং এসব নিখুঁতভাবে হ্যাণ্ডেল করতে হবে খামার বাড়িতে। পরিবারের প্রয়োজন এবং ক্ষমতা অনুসারে ডিম মাংস, দুধ যোগানের জন্যে মুরগি, হাঁস, কবুতর, ছাগল, গরু, ভেড়া পালন করার সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস